ইসতিয়াক আহমেদ তাহের
সবাই যদি চাকরি খুঁজে, তবে চাকরিটা দিবে কে ?
প্রায় দুই বছর আগে হবে, কোভিড মহামারি চলাকালীন সময়ে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে পড়ানোর সুবাদে দেশের একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রোগ্রামে নতুন ব্যাচের ওরিয়েনটেশন প্রোগ্রামে (ভার্চুয়াল) যোগদানের সুযোগ হয়েছিল । অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন সিনিয়র শিক্ষক বেশ গর্বের সাথে তাদের এ্যালমনাইগন কোন কোন সেক্টরে বেশ দাপটের সাথে চাকরি করছেন তা সংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরলেন । গর্ব করার মতই বিষয় । কিন্তু দু:খের বিষয়টি হল উদ্যোক্তা তৈরিতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কি ভূমিকা, এই সম্পর্কে তিনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোন ফ্যাকাল্টি মেম্বার বা কর্মকর্তা কোন ধরনের বক্তব্য রাখলেন না । অনুষ্ঠানটি দেখে একটি বিষয় আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ “উদ্যোক্তা তৈরি” নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয় এবং এ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথাই নেই।
তবে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি যে, তারা কোন ব্যতিক্রম নয় । এদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই মনে করে না যে দেশে উদ্যোক্তা তৈরিতে তাদের আদৌ কোন ভূমিকা আছে বা থাকা উচিত। They are more interested in becoming an eternal source of producing glorified clerks.
ইদানীং সোশাল মিডিয়া এবং প্রচলিত ব্রডকাস্ট মিডিয়াতে এম্প্লয়েবিলিটি (চাকুরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা) নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে । আমি এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করি । আমার মতে, এদেশের কর্পোরেট বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে বর্তমানে যে সকল চাকরি রয়েছে তার প্রায় ৯০% থেকে ৯৫% চাকরি করার জন্য তেমন কোন জটিল রকমের পুথিগত বিদ্যা বা দক্ষতার প্রয়োজন নেই । এইচআর এ আমার কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কর্মে উদ্যম থাকলে অনেক তথাকথিত অদক্ষ লোক ও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজ কাজে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে । অবশ্যই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে । আপনি যদি হজ বা উমরা করতে মক্কা-মদিনা গিয়ে থাকেন, তবে নিশ্চয়ই দেখেছেন, গ্রামের একটি অর্ধশিক্ষিত ছেলে, যে কিনা ঠিকভাবে বাংলাই বলতে পারত না, কিন্তু বিদেশে কাজে যোগদানের অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ চালানোর মত অনর্গল ৫/৬ টি ভাষায় কথা বলতে শিখে যায় ।
একজন বেকার পুরুষ বা মহিলাকে আপনি এম্প্লয়েবিলিটি বৃদ্ধির নামে তার দক্ষতা বৃদ্ধির যত চেষ্টাই করেন না কেন, সে যদি কর্মক্ষেত্রে এই দক্ষতা প্রয়োগের যথাযথ সুযোগ না পায়, তবে এই দক্ষতা অচিরেই হারিয়ে যাবে । যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভ লিডারশিপ কর্তৃক নব্বই দশকে প্রচলিত 70:20:10 থিওরিতেও কর্মজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ।
তাই আমি মনে করি, এম্প্লয়েবিলিটি থেকে আমাদের বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি বা চাকুরি প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধির উপর। দক্ষতায় কিছু ঘাটতি থাকলেও প্রকৃত কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে সেই ঘাটতির অধিকাংশই পূরণ করা সম্ভব । কিন্তু কাজের সুযোগ না পেলে অনেক দক্ষ লোকও একসময় অদক্ষ হয়ে পড়বে ।
তাই সরকারি বা বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই উদ্যোক্তা তৈরিতে অধিকতর মনোযোগী হওয়া উচিত । এদেশে বেকারত্বের যে ব্যাপকতা তা কেবল এম্প্লয়েবিলিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয় । আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশী সংখ্যক উদ্যোক্তা তৈরিতে সচেষ্ট হওয়া যারা কি না দেশের লক্ষ লক্ষ বেকার জনগোষ্ঠীকে একটি সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের সুযোগ করে দিবেন