ইসতিয়াক আহমেদ তাহের
ইদানিং এদেশে এইচআর প্রফেশনালদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে এইচআরবিপি ( হিউম্যান রিসোর্স বিজনেস পার্টনার) জব টাইটেলটির বহুল প্রচলন দেখছে পাচ্ছি । জব টাইটেলটি শুনতে বেশ ভাল লাগে । অনেক ক্ষেত্রে খুব কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এইচআর প্রফেশনালদের ও এই জব টাইটেলটি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে । এসব দেখে দেখে আমার মনে প্রশ্ন আসল, আমরা কি আসলেই জানি এইচআরবিপি কি এবং এই এইচআরবিপির কাজ কি ?
আমার লেখাটি পড়ে আপনাদের অনেকেরই মনে হতে পারে যে, “এই লোকের সমস্যা কি ? এই বিষয়ে তাঁর এত মাথা ব্যাথা কেন ?” উত্তরে বলতে চাই, আসলে এই বিষয়ে এতদিন আমার কোন সমস্যা বা মাথা ব্যাথা কোনটাই ছিলনা । কিন্ত সম্প্রতি আমার বিভিন্ন ক্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে যেয়ে আমার মনে হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই এই এইচআরবিপি জব টাইটেলটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না ।
আমি কেন এই জব টাইটেলটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে মনে করছি, তা বলার আগে একচু জেনে নিই যে এইচআরবিপি কি এবং এর কাজ কি ?
বর্তমান সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য এইচআর গুরু, ডেভ উলরিচ নব্বই দশকের শেষ দিকে তার লিখিত “হিউম্যান রিসোর্স চ্যাম্পিয়নস” বইয়ে এইচআর ফাংশনে চারটি স্পেশালাইজড রোলের বিষয়টি উল্লেখ করেন । ঐ চারটি রোলের মধ্যে প্রথমটি হল এইচআর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার, যার মুল দয়িত্ব হল এইচআর স্ট্র্যাটেজিকে বিজনেস গোলের সাথে এ্যালাইন করা । এর পর থেকেই মুলত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো উলরিচের এই এইচআর স্ট্রাকচারাল মডেলটি অনুসরণ করতে শুরু করে । পরবর্তীতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাইরেও অন্যন্য প্রতিষ্ঠানও এই এইচআর স্ট্রাকচারাল মডেলটি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অনুসরন করার চেষ্টা করে। উলরিচের এই এইচআর মডেলটিতে এইচআর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার (এইচআরবিপি) ছাড়াও আরও যে তিনটি রোলের বিষয় বলা হয়েছে, তা আপাতত এই আলোচনার বাইরে রাখছি ।

,
ফিরে আসি এইচআরবিপি কে এবং তার কাজ কি, এই বিষয়ে । মুলত: এইচআরবিপি একজন সিনিয়র এইচআর জেনারেলিস্ট । তবে একজন সাধারন এইচআর জেনারেলিস্টের তুলনায় একজন এইচআর বিপির কাজে কিছুটা ভিন্নতা আছে, যেমন:
(১) একজন এইচআরবিপি গতানুগতিক এইচআর ডিপার্টমেন্টের বাইরে কোন বিশেষ বিজনেস ফাংশন, বিজনেস ইউনিট কিংবা বিজনেসের কোন বিশেষ জিওগ্রাফিকাল এরিয়া, তা হতে পারে কোন কান্ট্রি বা সাব-রিজিয়ন বা রিজিয়নের এইচআর ফাংশনের দায়িত্বে থাকবেন । যেমন সাপ্লাই চেইন এইচআরবিপি বা এফএমসিজি প্রোডাক্ট ডিভিশন এইচআরবিপি বা কান্ট্রি এইচআরবিপি বাংলাদেশ বা এইচআরবিপি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ইত্যদি । এই উদাহরণগুলোর বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসার বা কাজের প্রকারভেদে ব্যবসার বিভিন্ন সেগমেন্টের জন্য কোন এইচআরবিপি নিয়োগ দিতে পারেন ।
(২) এইচআরবিপিকে যে বিশেষ সেগমেন্ট বা ইউনিটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে প্রাথমিক ভাবে সেই ইউনিটের হেডকে রিপোর্ট করবে। এই ইউনিট হেড হতে পারেন কোন ফাংশনাল হেড, বিজনেস ইউনিট হেড, ডিভিশন হেড, কান্ট্রি হেড, রিজিওনাল হেড ইত্যাদি । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইচআরবিপির সেকেন্ডারি রিপোর্টিং থাকবে এইচআর হেড বা সিএইচআরওর কাছে । অর্থাৎ এইচআরবিপির ডুয়েল রিপোর্টিং বা ম্যাট্রিক্স রিপোর্টিং থাকবে ।
(৩) একজন এইচআরবিপি স্ট্র্যাটেজিক লেভেলে কাজ করে । সে প্রতিষ্ঠানের মুল লক্ষের সাথে এইচআর প্র্যাকটিসগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং ওয়ার্কফোর্স স্ট্রাটেজি, ট্যলেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং অর্গানাইজেশনাল ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত এইচআর ইনিশিয়েটিভগুলোকে বিজনেসের গোলের সাথে এ্যালাইন করার জন্য তার ইউনিটের নেতৃত্ব এবং মুল এইচআর ফাংশনের সাথে একযোগে কাজ করে যায় । মুলত সে এইচআর এবং বিজনেসের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরী করে । নিচে এইচআরবিপির কাজ সংক্রান্ত একটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরা হল :
একটি বহুজাতিক এফএমসিজি কোম্পানিতে সেলস এবং সাপ্লাই চেইন ফাংশনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নিয়মিতভাবে প্রোডাক্ট সরবরাহের ঘাটতি হচ্ছিল, ফলে তাদের ব্যবসা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল । এই পরিপ্রেক্ষিতে, সেখানে নিয়োজিত এইচআরবিপি এই সরবরাহ জটিলতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পর উভয় পক্ষকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নেয় । এর পর এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা এবং বিশ্লেষণের পর উভয় ফাংশন একসাথে কাজ করে গোল এ্যালাইনমেন্টের সিদ্ধান্ত নিলেন । উভয় পক্ষই কিছু কমন কেপিআই দিয়ে তাদের কার্যক্রম মনিটর করার মাধ্যমে পন্যের সরবরাহ বজায় রাখা এবং স্টকআউট যেন না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন । উভয় ফাংশনের টীমগুলোর মধ্যে সমঝোতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এইচআরবিপি বিভিন্ন ক্রস-ফাংশনাল প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন রোলে জব রোটেশন চালু করলেন । এছাড়া দুই ফাংশনের মধ্যে সমন্বয় এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি পারফরম্যান্স মেট্রিক্সগুলোতে পরিবর্তন আনার সাথে সাথে দলগত পারফরম্যান্স ইনসেনটিভ পদ্ধতি চালু করলেন । এবং তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করার জন্য একটি শেয়ার্ড ড্যাশবোর্ড এবং ত্রৈমাসিক বিজনেস এ্যালাইনমেন্ট সভার প্রচলন করা হল । এত সব পদক্ষেপের ফলে কি লাভ হল ? ছয় মাসের মধ্যে তাদের পন্যের সহজলভ্যতা বেড়ে দাঁড়াল ৯৬% তে, স্টক আউটের ঘটনা ৩৫% হ্রাস পেল এবং কোম্পানিটির পন্যের বিক্রয় ১২% বৃদ্ধি পেল । এমনকি এই উদ্যোগগুলি ইন্ডাস্ট্রিতে “বেস্ট প্র্যাকটিস” হিসেবেও স্বীকৃত হল ।

,
(৪) একজন এইচআরবিপির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল প্রতিষ্ঠানের বিজনেস লিডারদের কোচিং বা মেন্টরিং এবং এইচআর বিষয়ে পরামর্শ দেয়া । এই পরামর্শের মাধ্যমে তিনি উক্ত বিজনেস লিডারদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের গতিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারেন। বিশেষ করে অনেক ক্ষেত্রেই বিজনেস লিডারগন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন এইচআর পলিসি বা শ্রম বিষয়ক আইন কানুন সঠিকভাবে নাও জানতে পারেন । এই ক্ষেত্রে এইচআরবিপি এই সকল বিষয়ে তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেন ।
এই বিষয়ে আমি আমার পেশাগত জীবনের দুইটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি:
প্রথম ঘটনাটার প্রেক্ষাপটে হল, আমি এইচআরবিপি (যদিও জব টাইটেল ভিন্ন) হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করার পর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে রিজাইন করেছি এবং আমার ডেপুটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছি । ঐ প্রতিষ্ঠানে আমার আর একদিন বা দুই দিন অফিস করতে হবে । এরকম সময়ে একদিন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আমাকে তার অফিসে ডাকলেন । আমি যেয়ে দেখি যে আমার ডেপুটিও সেখানে বসে আছে । এমডি সাহেব আমাকে যা বললেন তার সারাংশ হল:
HR Business Partner: All You Need To Know About the Role
কোন একজন ম্যানেজার চাকরি ছেড়ে যাবার সময় এমডি কে অনুরোধ করেন যে ঐ ম্যানেজারের অফিসে ব্যবহ্রিত গাড়িটি যেন কোম্পানি থেকে রাইট অফ করে তাকে দিয়ে দেয়া হয় । গাড়িটি মোটামুটি পুরাতন ছিল এবং বুক ভ্যালু সম্ভবত জিরো ছিল । উক্ত ম্যানেজার চাকরি ছাড়ার সময় পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে এবং বলে যে, সে আর চাকরি করবে না এবং সে আর তার স্ত্রী মিলে একটা ব্যবসা করবে । তাই মুলত তার বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে গাডীটি তাকে দিয়ে দিতে অনুরোধ করেন । এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ প্রতিষ্ঠানের এরকম ভাবে অফিসের গাডী দিয়ে দেয়ার কোন পলিসিও ছিল না। আমি আমার ব্যবহ্রিত অফিসের গাড়িটি অফিস ছাড়ার আগেই এ্যাডমিনকে পুরোপুরি হস্তান্তর করে আসি । যাহউক, উক্ত ম্যানেজার এ বিষয়ে সরারসরি এমডি সাহেবের সাথে কথা বলেন । এমডি সাহেব তার এই অনুরেধের প্রেক্ষিতে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে এবং প্রতিষ্ঠানে তার লন্বা সময় চাকরির বিষয়টি বিবেচনা করে তার এই অনুরোধটি অনুমোদন করেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে গাডীটি তাকে দিয়ে দেওয়া হয় এবং তার সব বেনিফিটের ফাইনাল সেটেলমেন্ট করে দেয়া হয় । এখানে উল্লেখ্য যে, এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না । আমি বিষয়টি পরে জানতে পারি এবং এই বিষয়ে এইচআরবিপি হিসেবে আমাকে অবগত না করায় বিষয়টি আমি মোটেই ভালভাবে দেখি নাই । সাধারনত এই ধরনের বিষয়গুলো এইচআর এর মতামত সহ এমডির কাছে উপস্থাপন করার কথা । তবে যেহেতু আমি প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম, তাই এ নিয়ে আর কোন আওয়াজ দিলাম না ।
যাহউক, ঐ ম্যানেজারকে ফেয়ারওয়েল দিয়ে বিদায় দেয়ার কিছুদিন পর আমরা জানতে পারলাম যে সে একই ইন্ডাস্ট্রিতে আরেকটি কোম্পানিতে জয়েন করেছে। এতে এমডি সাহেব অত্যন্ত বিব্রত বোধ করেন এবং সংগত কারনেই বেশ মনক্ষুন্য হন । যে বিষয়ে তিনি আমাকে ডেকেছিলেন সেটা হল, তাঁর কাছে Quarterly Performance Incentive এর ক্যালকুলেশন সহ ইনসেনটিভ প্রাপকদের ফাইনাল লিস্টটি এসেছে এবং তিনি লিস্টে উক্ত ম্যানেজারের নাম দেখতে পেলেন । যেহেতু পারফরম্যান্স ইনসেনটিভের সম্পুর্ণ ক্যালকুলেশন শেষ করতে একটু সময় লাগে, তাই উক্ত ম্যানেজারের বাকি সব প্রাপ্যের সেটেলমেন্ট হলেও পারফরম্যান্স ইনসেটিভের সেটেলমেন্ট তখনও হয় নাই । তো এমডি সাহেব আমাকে বললেন, “ওকে ইনসেনটিভের টাকাটা না দিলে কি হবে ?” আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কেন তাকে দিতে চাচ্ছেন না ?” উত্তরে তিনি বললেন, “এই যে সে আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে গাডীটা নিয়ে গেল !” জবাবে আমি বললাম, “আপনার সিদ্ধান্তকে আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি । কিন্ত আমরা যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোন ডিসিপ্লিনারী প্রসিডিউরের মাধ্যমে কোন এ্যাকশন নেই নাই বা নেয়ার সুযোগও পাই নাই, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কারন উপস্থাপন ছাড়া তাকে সরাসরি এই ইনসেনটিভের টাকাটা না দেয়াটা আমার মতে সঠিক পদক্ষেপ হবে না । এখানে একটা প্রসিডিউরাল গ্যাপ থেকে যাবে ।” এমডি সাহেব আমার কথায় একটু বিরক্ত হলেন এবং বললেন, “তার মানে কি তুমি তাকে টাকাটা দিয়ে দিতে বলছ ?” আমি তাকে বললাম, “দিয়ে দেয়ার কথা বলছি না । তবে আমাদের পারফরম্যান্স ইনসেনটিভ পলিসিতে আছে, কোন এম্প্লয়িকে ইনসেনটিভ পেতে হলে পারফরমেন্স এ্যাপ্রাইজালে “ভ্যালুজ” (মুল্যবোধ) এর ক্ষেত্রে অন্তত CONSISTENT রেটিং পেতে হবে । এক্ষেত্রে যেহেতু সে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে গাড়ির বিষয়ে তার অনুকুলে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আপনাকে প্রভাবিত করছে, সেই যুক্তিতে আপনি পারফরম্যান্স এ্যাপ্রাইজালে (উক্ত ম্যানেজার এমডি সাহেবকে সরাসরি রিপোর্ট করতেন) ভ্যালুজ ক্যাটাগরিতে তাকে INCONSISTENT রেটিং দিতে পারেন । এবং এই রেটিং থাকার কারন দেখিয়ে আপনি তাকে ইনসেনটিভের টাকাটা না দিলে, সেক্ষেত্রে প্রসিডিউরাল কোন গ্যাপ আর থাকবে না । তবে সেক্ষেত্রে তাকে আপনার সাথে এ্যাপ্রাইজাল মিটিং এ আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো উচিত । সে না আসলে, আপনি তাকে তার ভ্যালুজ রেটিং এবং ইনসেনটিভের টাকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারেন ।
আমার বক্তব্য শুনে এমডি সাহেব খুবই মুগ্ধ হলেন এবং আমার ডেপুটিকে বললেন, “This is what I call HR Business Partnering ।” আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসলাম ।
দ্বিতীয়টি আমার এইচআর কর্মজীবনের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ঘটনা । যদিও বা এখানে আমার কাজের পরিধি আরও বড় ছিল, কিন্ত আমার কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এইচআর বিজনেস পার্টনারিং । ঘটনাটি নিম্নরূপ:
আমি উক্ত প্রতিষ্ঠানের যে কয়টি বিজনেস ইউনিটের এইচআর বিজনেস পার্টনারিং এর দায়িত্বে ছিলাম, সেখানে কোন একটি ইউনিটের একজন এক্স-এম্প্লয়ি একদিন আমাকে ফোন করে জানালেন যে, সেই ইউনিটের বিজনেস হেডের নির্দেশে তাকে Clearance Letter দেয়া হচ্ছে না । আমি তাকে বললাম, “আমাকে একটু সময় দাও । এ বিষয়ে আমি তোমাকে পরে জানাবো ।” পরবর্তীতে আমি এ বিষয়ে কিছু তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে তার অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম ।
তখন আমি ঐ বিজনেস ইউনিট হেডের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি উক্ত এম্প্লয়িকে Clearance Letter দিতে নিষেধ করেছেন ?” তিনি আমার কথা শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গেলেন এবং উক্ত এম্প্লয়ি সম্পর্কে অনেকগুলো অভিযোগ করলেন । একটু শান্ত হওয়ার পর তাকে আমি বললাম, “দেখেন কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই শ্রেয় । আর সে তো আমাদের এখান থেকে চলেই গেছে । সে যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে হস্তান্তর না করে থাকে, তবে আপনি তাকে ডেকে সেটার সমাধান করতে বলতে পারেন । সে যদি তা ঠিকভাবে পালন না করে তবে আপনি চাইলে তার Clearance Letter এ সেই বিষয়টি উল্লেখ করে দিতে পারেন । কিন্ত বাংলাদেশের শ্রম আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মী কোন প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি শেষে একটি চাকরি অবসানের প্রত্যায়নপত্র (Clearance Letter) পাওয়ার অধিকার রাখেন এবং শ্রম বিধিমালার ৩১ বিধি অনুযায়ী আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে এই প্রত্যায়নপত্র দিতে মালিক বাধ্য । আমরা তাকে এই Clearance Letter না দিলে তা আইনসিদ্ধ হবে না এবং এ নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান আইনি জটিলতায় পড়ে যেতে পারে । সেটা আমাদের কারও জন্যই ভাল হবে না । এখন আপনি আমাকে বলুন এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি ?”
স্বাভাবিকভাবেই তিনি আমার কথায় খুশী হতে পারলেন না । আমি আমার রুমে যেয়ে এ বিষয়ে তার সাথে আমার কথপোকথনের একটা সামারি করে তাকে একটি ইমেইল দিয়ে দিলাম । এ নিয়ে আরও কিছু সময় ক্ষেপণের পর অবশেষে আমরা ঐ এম্প্লয়িকে একটি Clearance Letter দিয়ে দিতে পেরেছিলাম।
এইচআরবিপির কাজগুলো তো আমরা মোটামুটি জানলাম, এখন প্রশ্ন হতে পারে যে একজন দক্ষ এইচআরবিপি হতে হলে আমাদের কি কি বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকতে হবে? এর উত্তরে আমি বলব, প্রথমেই তার উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা, মার্কেট এবং অন্যান্য প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা থাকতে হবে, যাকে আমরা বলে থাকি Business Acumen. এছাড়া এইচআর ফাংশনের কিছু বেসিক প্রসেস যেমন এইচআর প্ল্যনিং, ট্যলেন্ট এ্যাকুইজিশন, পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট, টোটাল রিওয়ার্ডস, ডাটা এ্যানালাইটিক্স, এইচআর টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে তার ভাল কার্যকরী অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । এছাড়া আমার পেশাগত জীবনের দুইটি ঘটনার উল্লেখ করার মাধ্যমে আমি আগেই বলেছি যে একজন এইচআরবিপির উক্ত প্রতিষ্ঠানের সব এইচআর পলিসি এবং শ্রম আইনের উপরে পরিপূর্ণ দখল থাকতে হবে । তবেই এ সকল বিষয়ে তিনি বিজনেস লীডারদেরকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন । এছাড়া একজন এইচআরবিপিকে বিজনেস স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে ভাল ধারনা রাখতে হবে ।

,
এসকল বিষয়ের পাশাপাশি একজন এইচআরবিপিকে কয়েকটি পেশাগত বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যেমন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, কোচিং, কনসালটিং, নিগোসিয়েশন ইত্যাদি । তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, একজন এইচআরবিপিকে অবশ্যই একজন অত্যন্ত ভাল কমিউনিকেটর হতে হবে এবং মাল্টিপল স্টেকহোল্ডার ম্যানেজমেন্টে অত্যন্ত পারদর্শী হতে হবে ।
এরপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন ভাল এইচআরবিপির কিছু বিশেষ চারিত্রিক গুনাবলী থাকা আবশ্যক, যেমন সততা, ধৈর্য, প্রোএ্যাকটিভ এ্যাটিচিউড, দুরদর্শীতা, অপরের প্রতি সহমর্মিতা ইত্যাদি । তবে আমার মতে যে গুনটি থাকা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন, তা হল নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা এবং সাহস । একজন এইচআরবিপি বা আমি বলব যে কোন এইচআর পেশাজীবীকে অবশ্যই সাহসী এবং দৃঢ়চেতা হতে হবে । একজন এইচআর পেশাজীবী হিসেবে আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মী, বিজনেস লীডার কিংবা মালিকপক্ষকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ন্যায্য অথচ অপ্রিয় সত্য কথাটি সরাসরি বলতে সাহস না পান, তবে দীর্ঘমেয়াদে আপনার ক্যারিয়ারের গতি যেমন শ্লথ হয়ে যেতে পারে তেমনিভাবে আপনার চারিত্রিক এই দুর্বলতার কারনে উক্ত প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীগন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন । তাই আমার মতে কোন দুর্বল চিত্তের ব্যক্তির এইচআর পেশায় আসাই ঠিক না ।
এ প্রসংগে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, আমি কিছুদিন যাবৎ বেশ উদ্বেগের সাথে একটি বিষয় লক্ষ করছি । যখন আমি কোন ইউনিভার্সিটির এইচআর মেজর ছাত্র ছাত্রীদের জিজ্ঞেস করি যে, “কেন তুমি এইচআর এ মেজর করছ বা কেন তুমি এইচআর কে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাও ?” জবাবে দুইটি কারন বেশী শুনতে পাই, প্রথমত: “আমার ডেস্ক জব করতে ভাল লাগে” আর দ্বিতীয়ত “আমি অংক পারিনা” । অর্থাৎ এইচআর যেন অলস এবং আরামপ্রিয় কিছু নিরেট গাধাদের জন্য মানানসই একটি পেশা । তরুনদের মাঝে এইচআর পেশার এই ধরনের ভাবমূর্তি দেখে আমি সত্যিই হতাশ হয়ে পড়ি ।
তবে এজন্য আমি নিজেকে বা আমার মত যারা এ পেশায় সিনিয়র এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি তাদের দোষই বেশী দেখতে পাই । আমার মতে এইচআর পেশাজীবী হিসেবে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের পেশাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি নাই কিংবা পেশা হিসেবে এইচআর এর যথাযথ মার্কেটিং করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি । এ নিয়ে ইচ্ছা আছে পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত কিছু লিখার ।
আশাকরি এখন আপনি এইচআরবিপি পদটির কাজের পরিধি এবং এ কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, কর্মদক্ষতা এবং চারিত্রিক গুনাবলীগুলো বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা পেয়েছেন ।
সবশেষে আমি বলতে চাই, এইচআর বিজনেস পার্টনার জব টাইটেলটি যেন এই দেশে এইচআর পেশার জন্য কেবল মাত্র একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে না পড়ে । আশাকরি আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সিনিয়র এইচআর লিডারগন এই বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করবেন এবং যথাযথ অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা সম্পন্ন এইচআর পেশাজীবীদেরকে এইচআর বিজনেস পার্টনার পদে নিয়োগ দিতে সচেষ্ট হবেন । কারন এইচআরবিপি কোন কচি কাঁচাদের কাজ না । আমি আরও আশা করি যে, এ কাজে নিয়োগকৃত এইচআর পেশাজীবীগন যেন তাদের কাজের ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন সেজন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে যথাযথ মেনটরিং এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় সুযোগ দেয়া হবে । ফলে এ সকল দক্ষ এইচআর বিজনেস পার্টনারগন তাদের কাজের মাধ্যমে যেমন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, তেমনি এইচআর পেশার সন্মান বৃদ্ধিতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন বলে আশা করি ।
ইসতিয়াক আহমেদ তাহের কজন মানব সম্পদ বিষয়ক পরামর্শক
Excellent articulation
Great and helpful article. Liked the relevant and real life examples.
Well explained & excellently summarized sir.
Hope our HR leaders will understand the true facts and will not make it a fasion.
I have seen many entry-level Hr professionals to perform as HRBP whereas they were not properly marinated in their role.
Regards
Excellent write up
Thank you for the great sharing!