Ishtiak Ahmed Taher, SHRM-SCP
(আমাদের দেশে employee রিক্রুট করতে গেলে মালিকপক্ষ, ম্যানেজমেন্ট, এইচআর এবং হায়ারিং ম্যানেজারগন নিজ ইনডাস্ট্রির বাইরে থেকে রিক্রুট করতে চান না । আবার একই ভাবে সাধারণ কর্মীগনও নতুন ধরনের কাজ করতে একই ধরনের ভীতি এবং অনীহা পোষন করেন । ফলে এতে যেমন একদিকে নেতৃত্বগুন সমপন্ন যোগ্য কর্মী তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, আবার অন্যদিকে কর্মীদের জন্য চাকুরীর বাজারও সংকীর্ণ হয়ে যায় ।
কিন্ত বিশ্বজুড়ে অনেক গবেষনা এবং বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে দেখা যায় যে এক ইনডাস্ট্রির অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়েছে apparently unrelated অন্য কোন ইনডাস্ট্রির থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে।)
এইচআর কনসাল্টট্যান্ট হিসাবে কাজ করতে যেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেকটর, সিইও, এইচআর হেড এবং হায়ারিং ম্যানেজারদের থেকে প্রতিনিয়ত একটি কথা শুনতে হয়। কথাটি হলো “সব ক্যান্ডিডেটের যেন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা থাকে। আমরা অন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে লোক হায়ার করি না।” কিছু দিন আগে একটি স্বনামধন্য কোম্পানীর সিইও আমার সাথে যোগাযোগ করে একজন এইচআর ম্যানজোর এর চাহিদা পেশ করলেন। যথাযথই আমি অনেক খোজ খবর করে পাঁচ জন খুব যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর সিভি তাকে পাঠালাম। এক সাপ্তাহ পরে সিইও সাহেব জানালেন যে, “পাঁচজনের মধ্যে থেকে আমরা শুধু একজনের ইন্টারভিউ করব” । নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ঐ একজন কি ধরনের কোম্পানীতে কাজ করনে ? উক্ত কোম্পানীটি সিইওর কোম্পানীর সাথে অনেকটা জমজ ভাই বা বোন এর মত মিল । অথচ পাচঁ জনের মধ্যে চার জন কিন্তু একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন । শুধু ঐ তিনটি কোম্পানীর প্রোডাক্ট বা কাজের ধরন সামান্য ভিন্ন । কিন্তু তাতে কি ? অধিকাংশ ক্ষত্রেইে আমাদরে ম্যানেজমেন্ট বা মালিক পক্ষ সামান্যতম ঝুঁকি নিতেও রাজি না । এই একই ধরনের অভিজ্ঞতা সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায়।
আরও একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি।
আমার পরিচিত একজন অভিজ্ঞ সি-লেভেল বিক্রয় পেশাজীবী হঠাৎ একদিন ফোন করে বললেন “ভাই আপনার কাছে এই মুহূর্তে কী আমার জন্য কোন অপরচুনিটি আছে ? ” আমি একটু ইতস্তত করে বলাম, “একবারে ১০০% মিলে যাবে এরকম কোন vacancy নাই। আপনি তো মুলত এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন, কিন্তু আমার কাছে যেই হায়ারিং এ্যাসাইনমেন্টটি আছে, তারা কবেলমাত্র কনজুমার ইলেকট্রনিকস সেক্টর এর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সেলস এর লোক চাচ্ছে।” জবাবে তিনি বললেন “আরে ভাই বলেন কী! আমি হলাম জাত সেলসম্যান, এই সব টিভি, ফ্রিজ বিক্রি করা কোন ব্যাপার নাকি ? আমি বললাম “ভাই আপনার সাথে আমি ১০০% একমত। আপনার যোগ্যতা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই, কিন্তু ক্লায়েন্ট তো আর এত কথা শুনতে চায় না। তাদের চাহিদা কনজুমার ইলেকট্রনিকস এর লোক ছাড়া চলবে না”। এবার একটু অভিযোগের সুরেই বলে ফেললাম, “ভাই আপনি যখন আমার মাধ্যমে রিক্রুট করেছেন, কোন দিন কি আপনাকে অন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে একটা লোক দেখাতে পেরেছি ? এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও চানাচুর বিক্রির জন্য শুধুমাত্র চানাচুর বিক্রির অভিজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীকে দেখতেও চান নাই। তো আপনাদের চাকরির বাজার তো আপনারাই ছোট করে ফলেছেনে। সবসময় মশারির ভিতর আরেকটা মশারি খাটিয়েছেন।” ভদ্রলোক আমার কথায় বেশ মনক্ষুন্ন হলেন; কিন্তু সত্যকে তো আর অস্বীকার করার কোন উপায় নইে। আমার একার পক্ষে তো আর মার্কেটকে পরিবর্তন করা সম্ভব না । কিন্তু আমার একার পক্ষে হয়তোবা মার্কেটের ধারা পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে আমি তো এই বিষয় নিয়ে অন্তত একটি আলোচনা শুরু করতে পারি । মুলত এই চিন্তা ভাবনা থকেইে এই বিষয় নিয়ে লেখার অনুপ্রেরনা পেলাম ।
যা হউক, এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাদেরকে আমার কাজের ফিরিস্তি শুনানো নয়। আজকে আলোচনা করব এই যে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজের ইন্ডাস্ট্রির উপর যে আমাদের এত নির্ভরশীলতা, এর মূল কারনটি কি ? প্রাথমিক ভাবে চিন্তা করলে এই একই ধরনের কাজের উপর নির্ভরশীলতার বিষয়টি শুধুমাত্র এইচআর এবং হায়ারিং ম্যানেজারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক কর্মী তাদের কাজের ক্ষেত্রে বেশ অনমনীয় । ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তন তো দুরে থাক, একই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ভিন্ন রোলে কাজ করতেও অনেক আপত্তি। আমি ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে দেখেছি, মার্কেটিং এ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ( সাধারনত ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট বা এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার), অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বওে অন্য ধরনের কাজ যেমন সেলস, সাপ্লাই চেন বা প্রোডাকশন, কোয়ালিটি এশিউরেন্স এ কাজ করতে তাদরে তীব্র অনীহা। একই ভাবে লজিষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিতেও দেখেছি যে ওশেন ফ্রেইটে কাজ করছে আজীবন সে ওশেন ফ্রেইটে এবং যে এয়ার ফ্রেইটে কাজ করছেন সে সব সময় ঐ এয়ার ফ্রেইটেই কাজ করতে ইচ্ছুক। আবার ওশেন বা এয়ার ফ্রেইটের মধ্যেও সে যে কোন একটা ফাংশন, যেমন শুধুমাত্র কাস্টমার রিলেশন্স, অপারেশন, সেলস এ কাজ করতে ইচ্ছুক । আপনি যদি কাস্টমার রিলেশন্স এ অভিজ্ঞ লোককে সেলস এ কাজ করতে বলেন, তাহলে রাগের চোটে হয়তোবা রীতিমত চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে দিবে বা এইচআর এবং ম্যানেজমেন্টকে গালিগালাজ করে চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করবে । আর যদি চাকুরীতে ইস্তফা নাও দেয়, তবে অত্যন্ত দু:খরে সাথে মন খারাপ করে কাজ করতে থাকবে। খুব কম র্কমীই আছনে যারা এই পরিবর্তনটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন । এখানে হয়তোবা শুধু মাত্র দুইটি ইন্ডাস্ট্রির কয়েকটি পেশার উদাহরণ দিলাম, কিন্ত এই বিষয়টি এদেশের প্রায় সব ইন্ডাস্ট্রিতে র্কমরত সকল শ্রেনীর পেশাজীবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এই ধরনের সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা এবং পরিবর্তন-ভিতী বা আরামপ্রিয়তাকে প্রশ্রয় দেয়ার কারনে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধান বা সিওও/ সিইও পদের জন্য যোগ্য লোক খোঁজ করেন তখন এইসব পদের চাহিদা অনুযায়ী multi-skilled এবং ভাল নেতৃত্বগুন সম্পন্ন লোক খুজে পান না । কারন আমাদের দেশের অধিকাংশ পেশাজীবিগনই যাকে বলে one-dimensional । ফলে অনেক মালিককেই দেখছি অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য হয়েই অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিদেশীদের বিভাগীয় প্রধান বা সিওও/ সিইও পদে নিয়োগ করেন । ফলে দেশীয় পেশাজীবীদের জন্য ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর সুযোগ কমে যায় এবং অনেক পেশাজীবীই তার পেশাজীবনের অল্প সময় পরেই ক্যারিয়ার এর প্রত্যাশিত গতি হারান এবং mid-career সংকটে পড়ে যান। কিন্তু আগেই বলেছি, এই অনাকাংখিত পরিস্থিতির জন্য মালিক, ম্যানেজমেন্ট, এইচআর এবং কর্মী এই সকল পক্ষকেই যথাযথ দায়ভার নিতে হবে ।
এখন, আমার আজকের আলোচনায় যেই বিষয়টি নিয়ে মুলত আলোকপত করতে চাচ্ছি তা হলো সেরা আইডিয়ার জন্য নিজের ইন্ডাস্ট্রির বাইরে তাকানোর প্রয়োজনীয়তা । সারা বিশ্বে বিভিন্ন বাস্তব ঘটনা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বড় বড় কিংবা জটিল সম্যসার সমাধান বা নতুন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস এর ধারনা এসেছে অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। চলুন এ ধরনের কিছু ঘটনার কথা জেনে নেয়া যাক ।
র্ফমুলা ওয়ান রেসিং এর পিটস্টপ বাঁচাল শিশুদের জীবন
প্রথমেই যেই ঘটনাটি মনে আসল তা হল লন্ডনের Great Ormond Street Hospital (GOSH) এর কথা । নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা । এই শিশু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ শিশুদের হার্ট সার্জারি নিয়ে বেশ সমস্যায় ছিলেন । শিশুদের হার্ট সার্জারির পর অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে লাইফ সার্পোট মেশিন সহ শিশুদেরকে আইসিইউ তে স্থানান্ততের করতে যেয়ে যে ১৫ মিনিট সময় ব্যয় হত, এই সময়টাতে বিভিন্ন ভুলের কারনে হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গিয়েছিল । মূল বিষয়টি ছিল, সার্জারির পর শিশুর শরীরে লাইফ সার্পোট মেশিনের অনেক টিউব ও তার সংযোজিত থাকে । লাইফ সার্পোট মেশিন ও শিশুর শরীরে সংযুক্ত এই সব টিউব ও তার সহ চাকাযুক্ত একটি বেডে শিশুকে ওটি থেকে আইসিইউ তে স্থানান্তরের কাজটি বেশ কঠিন এবং ঝুঁকিপুর্ন ছিল । চলমান অবস্থায় এই সময়টাতেই কোন টিউব বা পাইপ শিশুর শরীর বা লাইফ সার্পোট মেশিন থেকে ছুটে গেলে শিশুর জীবন আশংকায় পড়ে যেত। অনেক চেষ্টার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই এই ভুলের সংখ্যা কমাতে পারছিলেন না । এরকম এক পরিস্থিতিতে, একদিন একটা লম্বা সার্জারির পর দুইজন সিনিয়র ডাক্তার কফি পান করতে করতে টিভিতে ফর্মুলা ওয়ান রেসিং দেখছিলেন । তারা দেখছিলেন যে রেসকারগুলো যখন তাদের নির্ধারিত পিটস্টপ এ আসে, সেখানে উপস্থিত সকল মেকানিক খুব পারদর্শিতার সাথে অতন্ত্য স্বল্প সময়ে ( ২- ২.৫ সকেন্ডে ) রেস কারটির চাকা পরিবর্তন এবং রিফুয়েলিং করে আবার রেসের জন্য প্রস্তুত করে ছেড়ে দিল। টিভি তে এই দৃশ্যটি দেখে তাদের মনে হল “আসলে ওরা যে কাজটি করে তার সাথে সার্জারির পর শিশুটিকে লাইফ সার্পোট মেশিন সহ ওটি থেকে আইসিইউ তে স্থানান্তর করার কাজটির মধ্যে বেশ মিল আছে। কিন্তু যেভাবেই হউক তারা এই কাজটিতে আমাদেও চেয়ে অনেক বেশী পারদর্শিতার পরিচিয় দিচ্ছে ।” এর পর পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফরমুলা ওয়ান এর তখনকার শীর্ষস্থানীয় দল ফেরারীর সাথে যোগাযোগ করেন। ফেরারী কর্তৃপক্ষ আনন্দের সাথে তাদেরকে সাহায্য করতে রাজী হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেরারীর পিটস্টপ এর কার্যক্রম নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষন করার পর বিশেষ কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেন ।
- প্রথমত, ফেরারী পিটস্টপ এ প্রত্যেক মেকানিক তার একটি নির্ধারিত স্থানে দাড়ায় এবং সেই স্থানে যাওয়ার ও আসার জন্যও একটি নির্ধারিত লেনের মধ্যে চলাচল করে। অথচ, হাসপাতালের ওটিতে এই ধরনের কোন নিয়ম বা লেন ছিলনা । যার ফলে, ওটিতে উপস্থিত সকল ডাক্তার এবং নার্স ওটির ভিতরে যে যার ইচ্ছামত চলাফেরা করতেন এবং এতে অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে দূর্ঘনটার সম্ভবনা বেড়ে যেত । পিটস্টপ থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওটিতে অবস্থানকারী সব ডাক্তার এবং নার্সদের ওটিতে প্রত্যেকের নিজ নিজ দাড়ানোর স্থান এবং চলাফেরার জন্য লেন নির্ধারিত করে দিলেন।
- দ্বিতিয়ত, হাসপাতালের ডাক্তারগণ দেখলেন ফেরারী পিটস্টপ এ সকল মেকানিক একাগ্রচিত্তে নীরবে যার যার কাজ করছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে শিশুকে লাইফ সার্পোট মেশিন সহ ওটি থেকে আইসিইউ তে স্থানান্তরের সময় উপস্থিত ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য এই ধরনের কোন নিয়ম ছিল না। যে যার ইচ্ছামত তারা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতেন এবং একে অপরকে বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। যার ফলে, ভুলের মাত্রা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেরারী পিটস্টপ এর মত হাসপাতালেও শিশুদেরকে ওটি থেকে আইসিইউ তে স্থানান্তরের সময় ডাক্তার এবং নার্সদের নীরবে ও মনোযোগ সহকারে যার যার নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের প্রথা প্রচলন করলেন।
- তৃতীয়ত, হাসপাতালের ডাক্তাররা আরও দখলেন যে ফেরারী পিটস্টপ এ একজন ব্যক্তি ললিপপের মত একটি প্ল্যাকার্ড হাতে রেস কারের সামনে দাড়িয়ে থাকেন। তার মূল দায়িত্ব হল পিটস্টপ এ কর্মরত সকল মেকানিকের কাজকে পর্যবেক্ষণ করা । সে সকল মেকানিক যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কিনা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে এবং শুধুমাত্র সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই সে রেস কারকে রেসে পূন:যোগদানের ছাড়পত্র দিয়ে রেস কারের সামনে থেকে সরে যায়। হাপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ফেরারীকে অনুসরন করে তাদের ওটি তে একজনকে “ললিপপ ম্যান”এর দায়িত্ব প্রদান করেন । ফেরারীর ললিপপ ম্যান এর মতই তার মূল দায়িত্ব ছিল সবার কাজ পর্যবেক্ষন করা এবং সব কাজ ঠিকমত সমপন্ন হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই শিশুটিকে লাইফ সার্পোট মেশিন সহ ওটি থেকে আইসিইউ তে যাত্রার অনুমতি দেয়া।
ফলাফল: মাত্র দুই মাসের মাথায় শিশুকে নিয়ে লাইফ সার্পোট মেশিন সহ ওটি থেকে আইসিইউ থেকে যাত্রাকালে ভুলের পরিমান ৩০% থেকে ১০% এ (অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশ) নেমে আসল। ফলে, সাথে সাথে হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হারও একইভাবে হ্রাস পেল।
এছাড়া একই ধরনের আরও কয়েকটি ঘটনা যা কিনা অন্য অন্য ধরনের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হল।
যুদ্ধ বিমান থেকে Baby Stroller
বর্তমানে নবজাতক শিশুদের অভিভাবকগন খুব সহজেই তাদের শিশুদের foldable baby stroller বা pram (perambulator) এর মাধ্যমে পরিবহন করে যে কোন ধরনের ভ্রমনে বের হতে পারেন। কিন্তু ১৯৬০ দশক পর্যন্ত বাজারে যে pram গুলো পাওয়া যেতো তা আকারে বড়, ভাবী এবং চাকাগুলো ভাজ করারও কোন ব্যবস্থা ছিল না । Pram এর নকশায় এর পূর্বে প্রায় ২০০ বছর তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। ওয়েন ম্যাকক্লারেন নামে যুক্তরাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত টেস্ট পাইলট এবং এ্যারোস্পেস
প্রকৌশলী যখন তার শিশু নাতনি সহ বেড়াতে আসা তার কন্যাকে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে আনতে গেলেন, তখন তিনি বিমানবন্দরে pram টি নিয়ে চলাফেরার ক্ষেত্রে তার কন্যার বিশেষ অসুবিধার বিষয়টি লক্ষ করলেন । একজন প্রকৌশলী হিসাবে এই pram সংক্রান্ত সমস্যাটি তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। ম্যাকক্লারেন তখন pram এর নকশাটি তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন এবং কিভাবে নকশাটিকে ব্যবহারকারীর জন্য আরও সহজ করা যায় তা নিয়ে ভাবতে লাগলেন । বলে রাখা ভাল, ওয়েন ম্যাকক্লারেন ছিলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বিখ্যাত ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান Spitfire এর নকশাকারী দলের একজন সদস্য । অবশেষে তিনি তার যুদ্ধবিমান নকশার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিশাল আকৃতির pram এর চাকাগুলোর নকশা পরিবর্তন করে বিমানের ল্যানডিং গিয়ার এর আদলে চাকাগুলোকেও ভাজ করা যায় এমনভাবে নকশাটি পরিবর্তন করলেন। Pram এর এই নতুন নকশাটি umbrella-fold buggy” (model: B01) নামে পরিচিতি পেল এবং তা তুমুলভাবে জনপ্রিয় হল। মোটামুটি গত ৫০-৬০ বছরে B01 মডেলের মূল নকশাকে অনুসরন করেই বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত baby stroller বা pram গুলোর নকশা তৈরী হচ্ছে আর ম্যাকক্লারেন ব্র্যান্ড এর baby stroller গুলো এখনও বাজারে অনেক জনপ্রিয়।
যুদ্ধক্ষত্রে থেকে নারীর স্বাস্থ্য উপকরণ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রাথমিক ভাবে ইউরোপ এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পরলে এক পর্যায়ে বিশ্ব জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন তুলার স্বল্পতা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কিম্বারলি ক্লার্ক নামের কোম্পানী এই সময় তাদের গবেষনার মাধ্যমে আবিষ্কৃত সেলুকটন নামে একটি তুলা সদৃশ বস্তুকে তুলার বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করে। কিম্বারলি ক্লার্ক কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিগন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর উর্ধতন কতৃপক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হন যে সেলুকটনই হতে পারে সার্জিক্যাল কটন এর একটি যথাযোগ্য বিকল্প দ্রব্য। যুক্তরাষ্টের সামরিক বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কর্তৃপক্ষ যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেলুকটনকে সার্জিক্যাল কটন এর বিকল্প হিসেবে গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সেলুকটন এর তরল পদার্থ শোষন ক্ষমতা সাধারন র্সাজক্যিাল কটন এর প্রায় পাচঁ গুন বেশী বলে প্রমানিত হয়।
তবে বিশ্ব যুদ্ধের পরে যেহেতু মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং আন্তজাতিক রেডক্রস কর্তৃপক্ষেরও সেলুকটন এর চাহিদা দ্রুত হ্রাস পায়, কিম্বারলি ক্লার্ক কর্তৃপক্ষ দ্রুত সেলুকটন এর বিকল্প ব্যবহারের বিষয়ে গবেষনা শুরু করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯২০ এর অক্টোবর এ কিম্বারলি ক্লার্ক কর্তৃপক্ষ মহিলাদের জন্যপ্রস্ততকৃত বিশ্বের সর্ব প্রথম disposable স্যানিটারী ন্যাপকিন কোটেক্স ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করেন। বাজারে আসার সাথে সাথেই কোটেক্স মহিলাদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয় এবং এই ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে বাজারে এখনও বর্তমান।
টয়োটা নিউইয়র্কের একটি চ্যারিটিতে অর্থের পরিবর্তে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করল
নিউইয়র্ক সিটি কেন্দ্রিক চ্যারিটি “ফুড ব্যাংক” যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্ষুধা-নিবারণকারী দাতব্য প্রতষ্ঠিান, যা প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষকে খাওয়ায়। অন্যান্য চ্যারিটির মত ফুড ব্যাংক ও তার দাতব্য র্কাযক্রম চালানোর জন্য বভিন্নি র্শীষস্থানীয় বানজ্যিকি বা খেলাধুলা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান যেমন টার্গেট, ব্যাংক অফ আমেরিকা, ডেল্টা এয়ার লাইনস এবং নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কির মত প্রতিষ্ঠানসমুহের আর্থিক অনুদানরে উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছলি । ফুড ব্যাংক এর তহবিলে দাতাদের মধ্যে টয়োটার নামও ছলি । তবে বাকি সবাইকে অনুসরন না করে আর্থিক অনুদানের পরিবর্তে টয়োটা কর্তৃপক্ষ দিতে চাইল “কাইজেন”, জাপানি ভাষায় যার র্অথ হল “ক্রমাগত উন্নয়ন”। টয়োটার মতে, কাইজেন টয়োটার ব্যবসায়কি মডেলের একটি প্রধান উপাদান এবং এর সাফল্যের চাবিকাঠি। কাইজেন পদ্ধতির মাধ্যমে টয়োটা তার গাড়ি তৈরীর অ্যাসেম্বলি লাইনে চলমান বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সঠিক চলাচল এবং গুনগত মানকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি, তার সার্বিক গাড়ী উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত এবং দক্ষ করে তুলে । কাইজেন মুলত সৃজনশীল চিন্তাধারা এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের সমন্বয়ে বড় কোন ফলাফল অর্জনের একটি বিশেষ ধরণের উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া । কর্ম পদ্ধতির দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোড় দিয়ে টয়োটা, ফুড ব্যাংকের সার্বিক কর্মকান্ডের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাল ।
কাইজেন পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে টয়োটার ইঞ্জিনিয়াররা নিউইয়র্ক এর হারলেমে ফুড ব্যাংক পরিচালিত একটি স্যুপ কিচেনে রাতের খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় জনপ্রতি ৯০ মিনিট থেকে কমিয়ে ১৮ মিনিটে নিয়ে আসলেন । একই ভাবে, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ফুড ব্যাংকের একটি খাবার প্যান্ট্রিতে, তারা প্রতিটি খাবারের ব্যাগ ভরাট করার সময় ১১ মিনিট থেকে ৬ মিনিটে নামিয়ে আনলেন । আবার ব্রুকলিন এর বুশউইকের একটি ওয়্যারহাউসে হারিকেন স্যান্ডির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের ত্রানকার্যে সাহায্যর জন্য কাজ করছিলেন ফুড ব্যাংকের একদল স্বেচ্ছাসেবক । একইভাবে কাইজেন পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি ত্রানের বাক্স প্যাক করার সময় ৩ মিনিট থেকে মাত্র ১১ সেকেন্ডে নেমে আসল । মার্গারেট পারভিস, ফুড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও সভাপতি বলেন, “টয়োটা আমাদের কমিউনিটিকে সেবা করার পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে”। টয়োটার মত একটি সম্পুর্ণ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ফুড ব্যাংক এর মত একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই কিছুটা অস্বাভাবিক কিন্তু সফল পার্টনারশিপই প্রমান করে যে আর্থিক অনুদান ছাড়াও কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চাইলে কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে তাদের বিভিন্ন কর্ম দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন উপায়েও সাহায্য করতে পারে ।
রকেট বিজ্ঞান, চিকিৎসা শাস্ত্র এবং তেল-গ্যাস প্রযুক্তির সমন্বয়
যদি প্রশ্ন করি, একজন রকেট বিজ্ঞানী, একজন হার্ট সার্জন এবং তেল গ্যাস ফিল্ড এ কর্মরত একজন প্রকৌশলীর মধ্যে মিল কোথায়? ২০০০ সালের ঘটনা । ডা: এলান লুমসডেন এবং প্রকৌশলী বিল ক্লাইন পাশাপাশি আসনে বসে বিমানে ভ্রমন করছিলেন। ডা: এলান লুমসডেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন শহরের বিখ্যাত মেথডিস্ট হাসপাতালে হার্ট সার্জন হিসাবে এবং বিল ক্লাইন বিখ্যাত এক্সন-মবিল কোম্পানীর ড্রিলিং রিসার্চ ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ভ্রমনের সময় ব্যক্তিগত পেশা সংক্রান্ত সাধারন আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে উভয়েই বুঝতে পারলেন, যদিও তারা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত, কিন্তু তাদের কাজের মাঝে যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। উভয়েই অনুধাবন করলেন যে তারা যদি তাদের কাজকে গভিরভাবে বিশ্লেষন করেন তবে উভয় পক্ষই মূলত দুইটি জিনিষ নিয়ে কাজ করেন, আর তা হল “পাম্প” এবং “পাইপ”। আপনি যখন ডাক্তার হিসাবে কৃত্তিম উপায়ে মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন করছেন কিংবা প্রকৌশলি হিসেবে গভীর সমুদ্রের তলদেশে খনন করে খনি থেকে তেল আহরন করছেন কিংবা মহাকাশে শুন্য বা জিরো গ্র্যাভিটিতে একটি পাইপ এর মধ্য দিয়ে ফুয়েল বা অন্য কোন তরল পদার্থ সঞ্চালনের কাজ করছেন, এই সকল ক্ষেত্রেই মৌলিক প্রযুক্তিটি কিন্ত একই ; যদিও প্রত্যেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ভিন্ন।
তাদের আলোচনার এক পর্যায়ে উভয়েই বুঝতে পারলেন যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের মধ্যে পেশাগত ক্ষেত্রে একজন আরেকজনের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখার অনেক সুযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই বিষয়ে গঠনমূলক কিছু একটা করা উচিত। এবং এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্টের হিউস্টন শহরে পরবর্তীতে তারা Pumps & Pipes নামের একটি সংগঠন তৈরী করেন যা মূলত মহাকাশ প্রযুক্তি (aerospace technology), চিকিৎসা শাস্ত্র (medical science), এবং তেল গ্যাস প্রযুক্তি (energy technology) এই তিনটি প্রযুক্তি নির্ভর সেক্টর নিয়ে কাজ করে। প্রতি বছর বার্ষিক কনফারেন্স অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই তিন ইন্ডাস্ট্রির সদস্যগন নিজ নিজ ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সমস্যা নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করেন । এছাড়া সারা বছর ধরে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের সমস্যাগুলো সমাধানে বিশেষ ভাবে অবদান রাখেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সমস্যাগুলো সংকীর্ন পাইপের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট গতিতে তরল পদার্থ সঞ্চালন সংক্রান্ত হয়ে থাকে। তাদের এই পারস্পরিক জ্ঞান আদান প্রদান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে তারা নিজ নিজ সেক্টরের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারছেন । উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে, খনিজ তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রকৌশলীগন ঘন তরল বর্জ (sludge) অপসারনের জন্য এক ধরনের বিশেষ ফিল্টার ব্যবহার করেন। এই একই মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্ডিওলজিস্টগন এমন একটি যন্ত্র তৈরী করেছেন যা দিয়ে তারা সহজেই রক্তনালী থেকে জমাট বাধা রক্ত (blood clot) অপসারন করতে পারছেন।
উপরের উদাহরনগুলো থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি ? অনেকটা বলা যায় “অন্যের কাজ থেকে শিখে নিজের কাজকে উন্নত করুন” (Learn from the outside to make things better on the inside)। উপরের ঘটনাগুলো একটি বিষয় বার বার প্রমান করে যে, ব্যবসা সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান যে সব সময় আপনার নিজের ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেই থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি যদি নিজ ইন্ডাস্ট্রির বাইরে অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে খোজ করেন তবে আপনার অনেক জটিল সমস্যার সমাধান পেয়েও যেতে পারেন। মূল কথা হল, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নিজ ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি অন্য এমন কোন ইন্ডাস্ট্রির দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত যাদের সাথে আপনার হয়তোবা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর দিকে অমিল থাকলেও মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যেতে পারে । ধরুন সাম্প্রতিক কালে ই-কমার্স বা ইটেইলারদের সাথে প্রতিযোগিতা করা অনেক ইন্ডাস্ট্রির জন্যই একটি নতুন অভিজ্ঞতা। এ ক্ষেত্রে যদিও কাজের ধরন এবং প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এক ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ইন্ডাস্ট্রি শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ থাকতে পারে । কোন নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা বা সমস্যা সমাধানের উপায় খুজে বের করার জন্য অন্য ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকানোর পিছনে কয়েকটি বিশেষ কারন উল্লেখ করা যেতে পারে:
- প্রথমত, আপনার নিজের ইন্ডাস্ট্রির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো কোন নতুন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বাজারে এনেছে অথবা সমস্যা সমাধানের কোন নতুন উপায় উদ্ভাবন করেছে, কিন্তু তা আপনি জানেন না, এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
- দ্বিতিয়ত, একই ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছেন, পেশাগত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই কোন ব্যতিক্রমর্ধমী সমস্যা সমাধানের জন্য ভিন্ন ধরনের জ্ঞান, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় যা কিনা ঐ ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে পওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
- তৃতীয়ত, অন্য পেশার পেশাজীবীদের সাথে কাজ করার ফলে দুপক্ষের মধ্যে চিন্তা ভাবনা বা সমস্যা সমাধানের ধরন বা দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন ধরনের প্রান চাঞ্চল্য আসতে পারে বা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হতে পারে ।
তাই যে বিষয় নিয়ে এই লেখাটি শুরু করেছিলাম, শুধুমাত্র নিজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে রিক্রূট করার প্রচলন বা নীতি আপনাকে সাময়িক সুবিধা দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে আপনার প্রতিষ্ঠান employee cloning এর স্বীকার হতে পারে। অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠানে যখন শুধুমাত্র home-grown talent বা একই ইন্ডাস্ট্রির অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে লোক রিক্রূট করা হবে, এক পর্যায়ে সবার চিন্তা ভাবনার ধরন অবিকল একই রকমের হয়ে যেতে পারে । ফলে নতুন কোন ধ্যান ধারনা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা ভাবনার অভাবে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমে এক ধরনের গতিহীনতা বা স্থবিরতা দেখা দেওয়ার মত বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে উপরে উল্লেখিত পরিস্থিতিগুলো যেন না ঘটে, সেজন্য নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে:
- প্রতিষ্ঠানর নিজস্ব এবং অভ্যন্তরীণ এক বা একাধিক “কর্মী দক্ষতা এবং নেতৃত্ব উন্নয়ন” কর্মসুচির প্রবর্তন করা একান্ত জরুরী । এ ধরনের কর্মসুচি অল্প সংখ্যক কর্মীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যতটা সম্ভব অধিক সংখ্যক কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরে job rotation এবং বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রার এবং প্রতিকুল পরিবেশে কাজ করার দক্ষতা অর্জনে পদক্ষেপ নেয়া ।
- যে সকল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক ইন্ডাস্ট্রির ভিন্ন ভিন্ন ধরনের শিল্প বা সার্ভিস প্রতিষ্ঠান আছে ( যেমন: আরএমজি, টেক্সটাইল, ফারমাসিউটিক্যাল, আইটি, ই-কমার্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এফএমসিজি ইত্যাদি ) সেখানে নেতৃত্বগুন সম্পন বাছাইকৃত কর্মীদের ভিন্ন ভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির একাধিক প্রতিষ্ঠানে job rotation এর সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে । এর ফলে multi-skilled কর্মী তৈরীর পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জটিল সমস্যা সমাধানে অভ্যস্ত এবং প্রতিকুল পরিবেশে নেতৃত্বদানে যোগ্যতা সমপন্ন অধিক সংখ্যক জেনারেল ম্যানেজার ডেভেলপ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে । ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চ পদে বিদেশী কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাবে । এখানে বলে রাখি, পেশায় কেমিক্যাল ইনজিনিয়ার হওয়া সত্বেও জ্যাক ওয়েলশ , জেনারেল ইলেকট্রিক গ্রুপ এর প্রাক্তন সিইও, জিই তে তার ৪১ বছরের কর্ম জীবনে বিচিত্র ধরনের সব রোলে কাজ করেছেন । তিনি কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, কনজুমার ইলেকট্রনিকস, বিমানের ইন্জিন, স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং এর মত বিভিন্ন ধরনের কাজ করে এক পর্যায়ে জিইর ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সিইও হিসাবে নিয়োগ পান ।
- প্রতিষ্ঠানের কিছু বাছাইকৃত পদে অন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে যোগ্যতা সমপন্ন কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরণ বা চিন্তা ভাবনার মধ্যে আরও ভিন্নতা এবং গতিশীলতা আনয়নের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে ।
- গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি সমুহ তাদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মী এবং ম্যানেজারদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নলেজ শেয়ারিং কার্যক্রমকে আরও বেশী উৎসাহ দিতে পারেন ।
তবে উপরের পদক্ষেপগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য মালিকপক্ষ এবং ম্যানেজমেন্ট এর পাশাপাশি এইচআর এবং সাধারন কর্মীদের যথাযথ সহযোগিতাও অত্যন্ত জরুরী । প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এ ধরনের পদক্ষেপ আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই দুরদর্শী এবংবাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপরীতে আপনার একটি বিশেষ competitive advantage হয়ে দেখা দিতে পারে। আপনার দক্ষ কর্মীরাই হতে পারে মার্কেটে আপনার বিজয়ের মুল হাতিয়ার ।
ইসতিয়াক আহমেদ তাহের পেশায় একজন মানবসম্পদ কনসালট্যান্ট । তার সাথে আপনি সরাসরি iat1502@gmail.com এ ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন ।